আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মি. ফাইনাল স্পেশালিস্ট আঞ্জেল ডি মারিয়ার ৩৬ তম শুভ জন্মদিন।

মেসিয়ান ফ্রেন্ডস ক্লাব বাংলাদেশ

১৩ই জুলাই ২০১৪।মারাকানায় বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতে  তৎকালীন আর্জেন্টাইন কোচ আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আর্জেন্টিনার বিগ গেম প্লেয়ারটা।ইচ্ছা ছিলো দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত টুর্নামেন্টের মঞ্চের ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামা। 



কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে থাইয়ের পেশি ছিঁড়ে যাওয়ায় তার অধরা থেকে যায় স্বপ্নটা।ইঞ্জেকশন নিয়েছেন, যন্ত্রণা উপশমকারী ওষুধ খেয়েছেন, সামনে স্বপ্ন ছোঁয়ার হাতছানি।তাই চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি, কিন্তু  তাতেও পায়ের ব্যথা কমছিল না। নিজের ফুটবল জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা, তবুও মাঠে নামতে চেয়েছিলেন তিনি।


ম্যানেজার আলেয়ান্দ্রো সাবেয়ার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালোই ছিল তার। তাই খুব ভোরে তাঁর ঘরে গিয়ে বলেছিলেন, ”আমাকে যদি মাঠে নামান তাহলে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত খেলে যাব।” সাবেয়াকে বলেছিলেন, বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে চান একবার। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে নেমে এসেছিল জলের ধারা।


ফাইনালের জন্য সাবেয়া তাকে ছাড়াই একাদশ ঘোষণা করলেন। তাঁর পরিবর্তে একাদশে জায়গা পেয়েছিলো এঞ্জো পেরেজ। সেকেন্ড হাফে হয়তো নামাতে পারে ভেবে ব্যাথা কমানোর জন্য  ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন! কিন্তু সাবেয়ার কাছ থেকে সেই ডাক আর আসেনি। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ  ফাইনালে শেষ মুহুর্তে গোটজের গোলে জিতে যায় জার্মানি। স্বপ্ন ভাঙে আর্জেন্টিনার। সাবেয়ার সামনে ম্যাচ শেষে আরও একবার চোঁখের জ্বল ফালায় ছেলেটা। 


আট বছর পর আবারও সেই ছেলেটার চোখে জল দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। তবে এবারের কান্না ব্যার্থতার না, সফলতার। 

বিশ্বজয়ের কান্নায় ধুয়ে মুছে গেল আট বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি।


১৮ই ডিসেম্বার ২০২২; লুসেইল স্টেডিয়ামে ঝেড়ে ফেলেছিলেন অতীতের সকল দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, বেদনা, স্মৃতি। ফাইনালে ফরাসিদের বিপক্ষে এক গোল এক এসিস্টের এক বিধ্বংসী ম্যাচ খেলে ২০১৪ এর ফাইনাল না খেলতে পারার আফসোসটা মিটিয়ে ছিলেন। আবেগাপ্লুত ছেলেটা গোল করে তার ইউনিক স্টাইলের সেলিব্রেশন শূন্যে হৃদয় আঁকলেন। কাঁদলেন। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পরে বিশ্বজয়ের পরও আবারও চোখে জল আনলেন। তবে এবার ছিলো আনন্দাশ্রু।

বিশ্বজয়ের কান্নার জলে ধুয়ে মুছে গেলো আট বছর আগের মারাকানার অভিশপ্ত ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতি।


বড় মঞ্চের এই আর্টিস্টের নামটা আনহেল ফ্যাবিয়ান দি মারিয়া। ২০২২ বিশ্বকাপের আগেও যিনি বিগ স্টেজে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন। 


২০০৭ অনুর্ধ্ব২০ বিশ্বকাপে ৩ গোল করে জয় করেন টুর্ণামেন্ট। 

২০০৮ অলিম্পিক গেমসের ফাইনালে গোল ছিল তাঁর।

২০২১ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে মারিয়ার গোলেই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। 

ফাইনালিসিমা-তেও মারিয়ার নাম ছিল স্কোরলাইনে।

এরপর বিশ্বকাপ ফাইনালে ২ গোলে অবদান।


৩৪ বছর বয়সি এই এসিস্ট মাস্টারের ক্লাব ক্যারিয়ারও ২৭ টি শিরোপার বর্ণীল সাজে সজ্জিত। যেখানে খেলেছেন ইউরোপের বিগ বিগ সব ক্লাবে। বেনফিকা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড, পিএসজি হয়ে এখন জুভেন্টাসে।


আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের কয়লার কারখানার এক দরিদ্র শ্রমিক পরিবারে জন্মনেয়া দি মারিয়া, যিনি নিজেও ছিলেন এক সময়ের কয়লা কারখানার শ্রমিক। সেখান থেকে আজ বিশ্বের তার জেনারেশনের ওয়ান অব দ্যা গ্রেটেষ্ট প্লেয়ার এবং আর্জেন্টিনা ইতিহাসের ওয়ান অব দ্যা গ্রেটেস্ট প্লেয়ার অব অল টাইম। 


১০০% আন্ডাররেটেড, ০% হেটার্স।

রেস্পেক্ট এবং শুভ জন্মদিন আর্জেন্টাইন ফুটবলের আর্টিস্ট আনহেল দি মারিয়া ❤️

To Top